… … আমরা যখন ওই খাড়া পাহাড় বেয়ে উঠছিলাম, ঠিক তখনই একটি জেট বিমান আমাদের মাথার উপর দিয়ে চক্কর মেরে চলে গেলো!
আমরা হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিলাম। দুই তিন মিনিট হেঁটেছি- এমন সময় ক্ষীণ একটা আওয়াজ পেলাম। চোখে দূরবীন লাগিয়ে আমার চক্ষু ছানাবড়া হয়ে গেলো! পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে পাঁচটি জঙ্গি বিমান আমাদের দিকে ধেয়ে আসছে! কমাণ্ডারের চোখেও দূরবীন। তিনি সাথে সাথে সবাইকে আত্মগোপন করার আদেশ দিলেন।
আমরা আত্মগোপন করলাম। কিন্তু সমস্যা বাঁধলো ওই মেয়েটিকে নিয়ে। যাকে একটু আগেই আমরা উদ্ধার করে এনেছি। মেয়েটি ছিলো মাসুদের কাঁধে। মাসুদ মেয়েটিকে নিয়েই আত্মরক্ষা করলো। তবে শেষ পর্যন্ত টিকতে পারলো না! জঙ্গি বিমানের একটি গোলা সরাসরি তাদের দুজনের উপরে পড়লো! সাথে সাথে ভস্ম হয়ে গেলো তারা। একটি গোলার কিছু অংশ আঘাত করলো কমাণ্ডারকে। তাঁর একটি হাত উড়িয়ে নিয়ে গেলো। তিনি জ্ঞান হারালেন!
বিমানগুলো আমাদেরকে না পেয়ে বিক্ষিপ্তভাবে কয়েকটি গোলা ছোড়ে চলে গেলো।
আমরা কমাণ্ডারের জ্ঞান ফেরাতে চেষ্টা করলাম। জ্ঞান ফিরে পাবার কিছুক্ষণ পর হঠাৎ করে কমাণ্ডার আদেশ করলেন,
-ফায়িয! এখন থেকে কমাণ্ডার হলে তুমি। আমি কমাণ্ডারের দায়িত্ব তোমার হাতে ন্যস্ত করলাম।
– এ আপনি কী বলছেন? এ হতে পারে না! কমাণ্ডার হতে হলে তো আর উভয় হাত থাকা জরুরি নয়! আপনিই কমাণ্ডার থাকুন- এটা আমার অনুরোধ!
– তুমি কি আমাকে কমাণ্ডার মানো?
– অবশ্যই!
– এখন আমার কমাণ্ড হলো- এখন থেকে তুমি কমাণ্ডার। ঘাঁটিতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তুমিই আমাদেরকে পরিচালনা করবে।
অগত্যা আমাকে কমাণ্ডারের হুকুম মেনে কমাণ্ডার হতে হলো! কমাণ্ডার সবাইকে লক্ষ্য করে বললেন, এখন থেকে ফায়িয তোমাদের কমাণ্ডার, এতে তোমাদের কারও আপত্তি আছে?
সবাই বললো, জি না, কোনো আপত্তি নেই। শুধু একজন কিছুই বললো না।
সে হলো মাসুদ! আমার প্রিয় এ বন্ধুটি চিরদিনের জন্য চলে গেছে! সে আর কিছু বলবেও না।
আমি প্রথমেই মাসুদ আর ওই মেয়েটির কাফন দাফনের হুকুম দিলাম। হুকুম পালন হলো। দ্রুত কিছু কাজ করতে হবে।
মাসুদ আর ওই মেয়েটির (ওর নামটা আজও আমার জানা হয় নি।) কবর দিলাম ঝোপঝাড় দেখে। এরপর উপরে কিছু ঘাস, লতাপাতা দিয়ে দিলাম। যাতে নতুন কবর বলে বোঝা না যায়। সালাহউদ্দিন সাহেবকে (কিছুক্ষণ আগেও যিনি কমাণ্ডার ছিলেন) জিজ্ঞেস করলাম, আপনি উঠতে পারবেন তো? নাকি ধরে ধরে নিতে হবে?
এর আগে তার হাতে ব্যাণ্ডেজ লাগানো হয়েছে। কয়েকটি টেবলেট খাওয়ানো হয়েছে। আমাদের সাথে প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই থাকে। আমিরের আবার ডাক্তারি বিদ্যাও জানা আছে। সে যদি এ পথে না আসতো, তাহলে দুবছর আগেই এমবিবিএস হয়ে যেতো!
সালাহউদ্দিন সাহেব বললেন, আমি উঠতে পারবো। সমস্যা নেই!
আমরা আবার পাহাড়ি গিরিপথে হেঁটে চলেছি …
:::: ভয়ঙ্কর ট্রাজেডি :::: _____ মানসূর আহমাদ
Advertisements